একজন ইউএনও, একটি কাক ডাকা ভোর, একটি শিশু - আজকের সংবাদ

সদ্য পাওয়া

Home Top Ad

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৯২৬৮৭০৭২৭

Post Top Ad

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৯২৬৮৭০৭২৭

মঙ্গলবার, ১৯ মে, ২০২০

একজন ইউএনও, একটি কাক ডাকা ভোর, একটি শিশু


একজন ইউএনও, একটি কাক ডাকা ভোর, একটি শিশু





আজকের সংবাদ ডেস্কঃ ত্রাণ দেয়া, মানবতা দেখানো, আর আইন প্রয়োগ করে একটি এলাকার মানুষকে মহামারির হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা। কাজ তিনটি একই সুতোয় গাথা। কিন্তু প্রতিক্রীয়া ভিন্ন। মাঠ পর্যায়ের একজন অফিসারও মাঝে মাঝে সরকারী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মানবতা ও আইন প্রয়োগ দুটোর মাঝে পড়ে যান। সেরকম একটি ঘটনার সুন্দর সমাধান দিলেন ঘিওরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার আইরিন আক্তার।





চুলুন শুনি তার কাছ থেকে তার অভিঙ্গতা, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, ঘিওর বাজারের সকল বিপনি বিতানগুলোর পিক আওয়ার ফজরের নামাযের পর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত, এসময় মার্কেট এলাকায় পা ফেলার মতো জায়গা নাকি থাকেনা! এখবর পাওয়ার আগে বেশ কয়েকবার ঘিওর বাজারে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে কিন্তু প্রতিবারই মার্কেট এলাকায় স্পাই থাকার কারণে মোবাইল কোর্ট অভিযানের সময় সকলে চোখের পলকে পালিয়ে যায়। প্রশাসনের সাথে এমন লুকোচুরি খেলায় মার্কেটের ক্রেতা বিক্রেতাদের বেশ লাগছিলো ।





মার্কেটের বিক্রেতাদের ভাবনা ছিলো- এতো সকালে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, সঙ্গীয় ফোর্স আরাম করে ঘুমাবে আর সেই সুযোগে তাদের কেনাবেচা ভালোই চলবে। তাই তাদের সকল ভাবনাকে অতীত করে মোবাইল কোর্ট অভিযানে সবার চোখকে ফাঁকি দেবার জন্য গাড়ির বদলে মোটর সাইকেল ব্যবহার করা হয়, দেখে যাতে চিনতে না পারে সেজন্য ছদ্মবেশ ধারণ করা হয়।





গত ১৮/০৫/২০২০ তারিখে সকাল ৮টায় মোবাইল কোর্ট অভিযানটি কাপড় পট্টির দুটি প্রবেশদ্বারে যৌথভাবে পরিচালনা করেন ঘিওর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার আইরিন আক্তার এবং মানিকগঞ্জ জেলার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। অন্যদিনের মতো স্পটে পৌঁছানোর সাথে সাথে সব দোকানের সাটার বন্ধ করে দেয়া হলো, ক্রেতারা দৌড়ে পালালো, যে যেভাবে পেরেছে। হাজী সাত্তার প্লাজার সিঁড়ি বেয়ে কাউকে কাউকে উপরে উঠতে দেখা গেছে, পিছু নিল পুলিশসহ আমার সঙ্গীয় লোকজন। ছোট্ট একটি বাচ্চা কোলে এক মহিলা উপর থেকে নেমে এলো। কেনাকাটা করতে তিনি এতোটুকু বাচ্চাকে নিয়ে মার্কেটে এসেছেন, যেখানে বাচ্চাটির নেই কোন স্বাস্থ্য সুরক্ষা। ছোট্ট বাচ্চাটি বাড়ি যাওয়ার জন্য মাকে অস্থির করে তুলেছে, বাচ্চাটি কাঁদছে, সাথে মাও। তাকে নাম মাত্র জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হলো। এরকম আরো একজন মা যার কোলে এক অবুঝ শিশু। তাকেও নাম মাত্র জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হলো। এদিকে বন্ধ সাটারের সামনে দাঁড়িয়ে সাটার খোলার আহবান, সেইসাথে অপেক্ষা। ভেতর থেকে মোবাইল বাজছে, কিন্তু সাটার আর খুলছে না। একসময় আরেকটি ছোট্ট বাচ্চার কান্না কানে এসে পৌঁছালো। ভয় হলো সাটারের মধ্যে যে মানুষগুলো আছে, তারা অক্সিজেনের অভাবে দমবন্ধ হয়ে মারা যাবে না তো! আবারো সাটার খোলার আহবান, কিন্তু ভেতর থেকে কোন সাড়া নেই। শাবল দিয়ে এবার একটি সাটার খোলা হয়েছে, কিন্তু ভেতরে লোকজন নেই। যে শিশুবাচ্চাটি কাঁদছিল, তার কান্নার আওয়াজও আর পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে এক ভদ্রমহিলাকে বাচ্চা কোলে নিয়ে পাশের বিল্ডিং মাওলানা মহিউদ্দিন প্লাজা দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে দেখে তার গতিরোধ করা হলো। কান্নারত শিশুটি এই বাচ্চাটি কিনা জানতে চাইলে তিনি তা স্বীকার করেন এবং তিনি এই বাচ্চাটির মা নন বলে জানান। বাচ্চাটির মা কোথায় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই বাচ্চাটির মা পালিয়ে গেছে, বাচ্চাটির মায়ের সাথে তিনি মার্কেটে এসেছেন, তিনি তার প্রতিবেশী হন। বাচ্চাটি এমনভাবে তাকিয়েছিলো যেটি দেখে মনে হয়েছে, এটি তার জন্য এক অচেনা পৃথিবী, এই পৃথিবীকে সে এখনই বিদায় জানাতে চায়। দ্রুত বাচ্চাটিকে তার মায়ের কাছে পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে চলে যেতে দেয়া হলো। এইছিলো কাকডাকা ভোরের সেই শিশুটির গল্প।(সুত্র জনমত)


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৯২৬৮৭০৭২৭