সোনারগাঁয়ে পাসপোর্টের ভেরিফিকেশনে পুলিশি বিড়ম্বনা
কামরুজ্জামান রানাঃ যখন পাসপোর্টের মান বাড়াতে তৎপর সরকার তখনই নতুন পাসপোর্টের আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছে এ বিষয়ে বিরূপ ধারণা। কাগজ-পত্র দাখিল করে যত দ্রুত গতিতে আঙ্গুলের ছাপ, ছবি তুলে আবেদন সম্পন্ন করা হয়, ঠিক তারই উল্টো চিত্র দেখা যায় পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন করার ক্ষেত্রে। আবেদন করার পর থেকেই সেই পাসপোর্ট নিয়ে শুরু হয় নানা বিড়ম্বনা।
এই বিড়ম্বনা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়,ভেরিফিকেশনের নামে কিছু পুলিশ সদস্যের টাকা হাতিয়ে নেয়াকে ঘিরে। আবেদনকারীর সত্যতা যাচাই-বাছাই করতে তার বাসায় না গিয়ে ফরমে দেয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করেই, চায়ের দোকানে বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে খরচাপাতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয় পুলিশি ভেরিফিকেশনের কাজ। পাসপোর্ট পাওয়ার বিড়ম্বনা থেকে বাঁচতে খুশির তুলনায় এখন বেশির ভাগ মানুষই বাধ্য হয়েই দেয় এই খরচাপাতির টাকা।
এইচএসসি পরীক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম, বাবা-মায়ের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার পিরোজপুর ইউনিয়নের ছয়হিস্যা এলাকায় বাস তার। পরিবারের সাথে ওমরা করতে দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য গত ৩রা মে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন তিনি। ডেলিভারি স্লিপে উল্লেখ থাকা ২১ দিন পর পাসপোর্ট পাবার কথা ছিল তার। কিন্তু তার এই পাসপোর্ট পাবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ পুলিশ ভেরিফিকেশন। আবেদনের কিছুদিন পরই আব্দুল হাই নামে এক পুলিশ সদস্যের ফোন আসে জাহাঙ্গীর আলমের কাছে। নাম-ঠিকানা নিশ্চিত হওয়ার পর তার সঙ্গে দেখা করার কথা বলেন তিনি। কিন্তু ভেরিফিকেশন করতে বাসায় আসার কথা বলতেই একটু ব্যস্ত আছি বলে এড়িয়ে যায় পুলিশ সদস্য। উল্টো তিনি জানান, দেখা করতে বলেন। তা না হলে আপনার পাসপোর্ট প্রিন্টে যাবে না। সঙ্গত কারণেই শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর তার মামাকে আব্দুল হাইয়ের নাম্বার দিয়ে ফোন করতে বলেন। মামা বলেন, আপনি ভেরিফিকেশনের জন্য এসেছেন তাহলে বাসায় আসেন। আমরা কোথায় থাকি, কি করি সেটা দেখে যান। কিন্তু আব্দুল হাই কোনোভাবেই বাসায় আসতে রাজি না। জাহাঙ্গীরের মামার ফিরতে রাত হয়ে যাবে শুনেও যত রাতই হোক তার সঙ্গে দেখা করার নির্দেশ দেন তিনি। অনেকটা বাধ্য হয়ে একাই দেখা করতে যান জাহাঙ্গীর আলম। দেখা হলে আব্দুল হাই বলেন, আমার শুধু আপনার একটা স্বাক্ষর লাগবে, এজন্য বাসা-বাড়িতে যাওয়া একটু ঝামেলার কাজ। আপনারা কে কেমন অবস্থায় থাকেন। এজন্যই বাইরে দেখা করি। সঙ্গত কারণেই তখন কিছু সময়ের জন্য আব্দুল হাইকে নিয়ে মনে একটা ভালো ধারণা সৃষ্টি হয়। কিন্তু স্বাক্ষর করার পরই চা-পান খাওয়ার জন্য বকশিশ দাবি করেন আব্দুল হাই। পকেট থেকে দুইশ’ টাকা বের করে দিতে গেলে আব্দুল হাই বলেন, এসব কি দিচ্ছেন। এক হাজার টাকাতো দেবেন। এতো টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় কিছুটা চটে গেলেন পুলিশ সদস্য। জাহাঙ্গীর বলেন, আপনি ভেরিফিকেশন করবেন করেন। এতে আবার টাকা দিতে হবে কেন। আমি তো আর চোর-সন্ত্রাসী না। উত্তরে আব্দুল হাই বলেন, টাকা দিলে ভেরিফিকেশন হবে, না দিলে হবে না। এটাই নিয়ম। সবাই জানে। দীর্ঘ কথাকাটাকাটির পর বাধ্য হয়েই এক হাজার’ টাকা দিয়ে ফিরে যান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আব্দুল হাই নারায়ণগঞ্জ ডিএসবি শাখার একজন সদস্য। তিনি ছাড়া আরো দুইজন ডিএসবি সদস্য সোনারগাঁ থানার পুলিশ ভেরিফিকেশনের কাজ গুলো সম্পন্ন করে থাকেন। এ ব্যাপারে সোনারগাঁ থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুজজামান জানান, পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিকেশনের কাজ সোনারগাঁ থানা ও ডিএসবি শাখা দুই জায়গা থেকেই হয়। তিনি আব্দুল হাই নামে সোনারগাঁ থানায় কেউ নেই দাবি করেন।
ভেরিফিকেশনে টাকা হাতিয়ে নেয়া পর্যন্তই ক্ষ্যান্ত হননি এই পুলিশ কর্মকর্তা। টাকা নেয়ার দুই দিন পর এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে আবারও ফোন দিয়ে হুমকি দেন। তার মামা কি করে? তারা এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে ভাল হবে না বলেও হুমকি দেন আব্দুল হাই। দেখে নেয়ার কথা জানান আব্দুল হাই নামের এই অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জের এডি মোঃ মাকসুদুর রহমান বলেন, পাসপোর্টের সব রকম এনরোলমেন্টের কাজ সবই আমাদের হাতে থাকে। কিন্তু ভেরিফিকেশনের দায়িত্ব পুরোটায় থাকে পুলিশের বিশেষ বিভাগের উপর। তারা কার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভেরিফিকেশন করছে এটা তাদের ব্যাপার। এ বিষয়ে আমাদের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। বিষয়টি নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার দেখেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন