অবৈধ ইট ভাটা গিলে খাচ্ছে রূপগঞ্জ - আজকের সংবাদ

সদ্য পাওয়া

Home Top Ad

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৯২৬৮৭০৭২৭

Post Top Ad

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৯২৬৮৭০৭২৭

বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২

অবৈধ ইট ভাটা গিলে খাচ্ছে রূপগঞ্জ


রুপগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
-নায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর, ভোলাব, গোলাকান্দাইল, ভূলতা ইউনিয়ন ও তারাব,  কাঞ্চন পৌরসভা।  রয়েছে শতাধিক অবৈধ  ইট ভাটা। এক সময়ের সবজির ভাণ্ডারখ্যাত দাউদপুর,  ভোলাব ইউনিয়ন এখন অবৈধ ইটভাটার রাজ্য। রূপগঞ্জের ৭ টি ইউনিয়ন ও ২ টি পৌরসভায় মোট ইট ভাটা ২২৭ টি। এর মধ্যে হাতে গোনা ৭/৮ টি ইট ভাটা বৈধতা রয়েছে। গত প্রায় দুই যুগ ধরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটার কারণে সেখানে আর আগের মতো ফসল হয় না।


সরেজমিন দাউদপুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ। নদ-নদীর তীর যেদিকে চোখ যায়, শুধুই সারি সারি ইটের ভাটা। স্থানীয় নুরুন্নেসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দেবই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাজীরবাগ মাদ্রাসা ও খাস কামালকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশের বাড়িঘর ঘেঁষেও রয়েছে ইটভাটা। সেখানকার বিষাক্ত ধোঁয়া ও ধুলাবালিতে মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। আর বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে কৃষিজমি ও সাধারন মানুষ। একই চিত্র রূপগঞ্জের সকল ইট ভাটা এলাকার আশপাশ। 


এদিকে ইটখোলার মাটি বহনকারী ট্রাক্টর চলাচলের কারণে এলাকার রাস্তাঘাট ভেঙে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। ইটভাটাগুলোর সামনে কাঠ ও টায়ারের স্তূপ। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এসব পোড়ানো হয় সেখানে। এতে বাতাস দূষিত হয়ে শ্বাসকষ্ট, চর্ম ও হাঁপানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা। আবার লোকালয় ও নদী থেকে অন্তত তিন কিলোমিটার দূরে ইটখোলা করার নিয়ম থাকলেও কেউই তা মানছেন না। কৃষি জমিতে ইটভাটা তৈরিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তারও তোয়াক্কা করছেন না কেউ।

উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা কৃষি ও পরিসংখ্যান অফিস, পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার  অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। অথচ কৃষিকাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শীতলক্ষ্যা নদের তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অবৈধ সব ইটভাটা। উপজেলা প্রশাসনের তালিকায় এ ভোলাব, কাঞ্চন, ও রূপগঞ্জ ইউনিয়নে ৯০ শতাংশ ইটভাটা নদীর তীরে রয়েছে। এতে নদীসহ আশেপাশের পরিবেশ হুমকীর মুখে। 


অভিযোগ রয়েছে, পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে প্রশাসনের নাকের ডগায় একের পর এক ইটখোলা গড়ে উঠলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। স্থানীয়রা জানান, প্রশাসন, থানা পুলিশ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও এলাকার মাস্তানদের ‘ম্যানেজ’ করেই এসব ইটভাটা চালাচ্ছে মালিক পক্ষ। প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও কয়েক দিন পর আবারও চালু হয়ে যায় ইটখোলাগুলো।

উপজেলা প্রশাসন জানায়, গত বছর দুয়ারা এলাকার অভিযান চালিয়ে ছয়টি ইটভাটা থেকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করে পরিবেশ অধিদপ্তর। আর গত নভেম্বরে তিনটি ইটভাটাকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া গত ৪ থেকে ৬ নভেম্বর এবং ১২ থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত দুই ধাপে মোট ছয় দিনের অভিযানে লক্ষ্যা শিমুলিয়া, বেলদী ও খৈসাইর এলাকায় প্রায় ৩০টি ইটভাটার অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।


স্থানীয়রা বলছেন, দাউদপুর, রূপগঞ্জ ও কাঞ্চন এলাকায় একসময় প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদন হতো। কিন্তু বর্তমানে ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় এখানকার আবাদি জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত পরিবেশ দূষণে গাছেও ফল ধরছে না। এতে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য।


আতলাপুর এলাকার কৃষক সামাদ মিয়া বলেন, ইটভাটার কারণে আমাগো খেত-খামারে আগের মতন ফলন অয় না। গাছে ফল আহে না। আগে নারিকেল গাছে ডাবের কাঁদি ঝুইলা থাকত। অহন ডাবগুলান ছিট পইড়া যায়গা।’


উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেহা নূর বলেন, ইটভাটাগুলোর কারণে উপজেলার সকল এলাকার ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে। আগে বিঘায় এখানে ধান উৎপাদন হতো ২৫/৩০ মণ। এখন বিঘায় ২০ মণও উৎপাদন হয়না।


খাস কামালকাঠি এলাকার শিক্ষক রতন বসাক বলেন, ‘একসময় দাউদপুরে বইত নির্মল বাতাস। চারদিকে ছিল সবুজের সমারোহ। এখন যেদিকে চাইবেন ইটভাটা আর ইটভাটা। ধোঁয়া আর ধুলায় একাকার। এসবের বিরুদ্ধে অভিযান চলে, এরপর আবার শুরু হয়।


রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আইভী ফেরদৌস বলেন, ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া জনস্বাস্থ্যের ওপর তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। লোকজন শ্বাসতন্ত্র, ফুসফুস ও স্নায়ুতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হয়। অতিরিক্ত দূষিত বায়ু সেবনে গর্ভে থাকা শিশুর মৃত্যুও হতে পারে।


তবে ইটভাটার মালিকদের বক্তব্য ভিন্ন। ভোলাব ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি হাসান আশকারী, কাঞ্চন পৌরসভা ভাটা মালিক সমিতি সভাপতি পনির কমুশনারও দাউদপুর মালিক মজিবুর রহমানের বক্তব্য প্রায় একই রকম, তারা বলেন, ‘ইটভাটার কারণে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষ কাজ করে খাচ্ছেন। আমরা তো ক্ষতি করছি না। আমাদের থেকে বেশি ক্ষতি করছে বিভিন্ন আবাসন কোম্পানী। 


নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে বেশ কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করেছি। সামনে আবারও অভিযান চলবে।


রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল হক বলেন, ‘এক মাস আগে ইটভাটার মালিকদের নিয়ে বৈঠকে বলে দেয়া হয়েছিল, যাদের লাইসেন্স আছে কেবল তারাই ইটভাটা চালাতে পারবেন।


রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ বলেন, ‘প্রশাসন অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করলে পুলিশ সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৯২৬৮৭০৭২৭